কোয়ারেন্টাইনের কাব্য প্রথম পর্ব




 

রক্তের রঙ

 

এই যে আকাশ,শুনছ?
আমায় একটু মেঘ দিতে পারবে?
বিষ্টি নামাব আমার প্রিয়ার মাথার ওপর।
বিষ্টি যে ওর ভারি পছন্দের।
বিষ্টিভেজা পথে হাঁটব দুজন।

অকস্মাৎ বিষ্টিতে
বেরসিক মানুষের দল যখন আশ্রয় খুঁজবে,
তখন হাতে হাত রেখে দুজন হেঁটে

 যাব পথ থেকে পথে।
ঘরে ফিরে আঁকব প্রিয়ার বিষ্টিভেজা ছবি,

গাঢ় রক্ত বুলিয়ে
রঙিন করব প্রিয়াকে দেয়া

আমার লাল গোলাপের পাপড়ি।
প্রিয়া দেখে বলবে-গোলাপের রঙটা কেমন কাঁচা লাগছে,
আমার নিয়ে আঁকবে তুমি,

তবু তোমার কিপ্টেমি?
হাসব আমি। প্রিয়া জানে না,

জানে আমার তুলি,
আমার হৃদয়ের রক্ত শুকিয়ে এখন হয়েছে বাদামি কালি।

 

 

 

 

মিছে হাসি দাও

 

 

আমায় মিছে হাসি দাও,
আমি সব নেব সয়ে।
এ নকলের ভিড়ে
কী লাভ বলো,নিজেকে হারিয়ে
সত্যি হাসির খোঁজে যেতে?

হে সখী,আমায় মিছে হাসি দাও
আর তোমাতে হারাবার দুঃখ দাও
আমি তো সব নকলের হাট বসাব
আমার ভাঙা নটমন্দিরের বারান্দায়।

আমায় মিছে হাসি দাও,
মিছে হাসিতে মুছে দাও
আমার মনের ফাটল মূহুর্তের তরে।
সখী,আমি যে মিছে হাসির দোকান বসাব
আমার মনের ঘরে।

 


সিমোনার খুঁজে ফেরা

 

শহরে নতুন আঁধার এসেছে,
চারটে শতাব্দী দেখা শহর
এ আঁধার দেখেনি কভু আগে।
এ শহরের সিমোনা কাফকা হাতে
খুঁজে ফেরে তার সার্ত্রেকে।

একজোড়া কালো চোখ নির্ঘুম
খুঁজে চলে মৃত্যুদূতের মাঝে,
ল্যাম্পপোস্টের নিচে শ্বাপদের রূপ
ধরে আসে অদৃশ্য জীবন,
আজরাইলের ডানায় ভেসে আসে
হায়েনা প্রহরের ডাক।

চারটে শতাব্দীর মৃত্যু দেখা শহরে
ওলাবিবি হাঁটে শাল গায়ে জড়িয়ে।
চৈতালি বাতাস থেমে যায়,সভয়ে
ছুঁয়ে দিতে চায় নতুন ভোরের আলো।
মুঠোফোনে সারারাত কান চেপে রাখে
নাইপল পড়া সুন্দরী, কাফকা হাতে
এ শহরের সিমোনা অদৃশ্য মৃত্যুর দোরে
খুঁজে ফেরে তার সার্ত্রেকে।

 

 


ভোরের চিঠি

 

ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গেল সহসা,

অথচ আমি দারুণ ঘুমকাতুরে,

পুব আকাশের গোলাপি আলো দেখিনা কখনো,

সূর্যদেবের রথ দেখার কথা তো আরো পরে!

 

বিছানার পাশে আমার জানালার ধারে

দেখি ক্যাকটাসের পাশে আছে পড়ে

একটা ছোট্ট খাম,ওপরে আমার নাম।

শিউলির গন্ধছড়ানো এক বেনামী চিঠি ওর ভেতরে,

‘মেয়েটা গতকাল রাতে মারা গেছে।

তোমাকে খুঁজেছিল সে শিয়রের পাশে,

চলে যাবার আগে।’

 

বুকের ভেতরটা একটানে নিল ছিড়ে

এক অদৃশ্য চিল,রক্তের ধারা গড়িয়ে

নেমে এলো আমার বুকের ফাটল বেয়ে।

‘আমায় কে মিথ্যে বলেছিলে,মেয়ে?

বলেছিলে ভালো আছ,এই ভালো থাকার নমুনা?

এভাবে পালিয়ে বিদায় নিলে এ কোন খেলার ছলে?’

সেই ভোর থেকে ঘুম আমার বিদায় নিল চিরতরে,

অথচ আমি আজীবনই ছিলাম দারুণ ঘুমকাতুরে!

 

 

 

ভালোবাসা নিয়েছিল বিদায়

 

আমি চলে যাব চিরতরে,প্রিয়,

ভালোবাসা নিয়েছিল বিদায় এই বলে,

ফিরে তাকায়নি একবারও পেছনে।

শেষ বিকেলের নরম আলো সেদিন যেন

একটু তাড়াতাড়িই মিশেছিল আঁধারে,

সন্ধ্যাতারার সাথে মিশবে বলে দিগন্তের ওপারে।

 

ভালোবাসার কাছে কি খুব বেশি কিছু চেয়েছি?

ওকে কি বলেছি নাইটিঙ্গেল হয়ে বুকের রক্তে

আমার বাগানের লাল টকটকে গোলাপ ফোটাতে?

আমি কি ওর কাছে চেয়েছি পাখিদের সেতু বানাতে,

আকাশ জুড়ে মেঘেদের সীমানা ছাড়িয়ে স্বর্গ ছুঁতে?

তবে কেন ছেড়ে গেল সে আমায় যখন আমি হাত বাড়িয়েছি?

 

সহস্রবার আমি এসেছি ভালোবাসার কাছে,ডাকঘরে

ওর ঠিকানায় পাঠিয়েছি অযুত চিঠি হলদে খামে ভরে।

পিরেমাস হব বলে বুকে চালিয়েছি ছুরি,বাগানের ঘাসে

আমার লাল রক্ত ইরানি কার্পেটের জটিল নকশা এঁকেছে।

ভালোবাসা আমায় দূরে দিল ঠেলে,না গেল কিছু রেখে,

ভাবল না,মানুষ বাঁচে কোন আশায়,কোন স্বপ্ন বুকে ধরে

হাজার মেঘের ঢলে দিনের সূর্য রাতে চাঁদ নিভে গেলে?




দিগন্তের ওপারে আকাশটা আরো নীল


দিগন্তের ওপারে আকাশটা আরো নীল

তাই চাপা কান্না আর বোবা আতর্নাদ

চেপে বসে করোটির গহীন কোণে

আমরা আকাশটা আরো নীল রঙে রাঙাব

বলে পাঁজরের রুক্ষ ক্ষেতে আরো বেশি

নীল চাষ করি,আর কামনা করি আরো দুচোখের

বৃষ্টি ঝরে উর্বর করে তোলে সেই শস্যক্ষেত


কেবল এক নীল আকাশের তলে দাঁড়াব তাই

ক্রমাগত ঘুরপাক খাই কোনো এক অদৃশ্য

হাওয়াই মিঠাইয়ের কলে,চিনির মত গলে গলে

পড়ে আমাদের আলোর মুখ না দেখা স্বপ্নগুলো

দড়িবাজের মত পুলসিরাত পাড়ি দিই দিনরাত

যাতে দু'পা দিয়ে আরো জোরে ঠেলতে পারি

মাথা নুইয়ে দেয়া মেঘের ঘনকালো সিলিং

জানালার কাচে মুখ রেখে চিন্তা করি,

দিগন্তের ওপারে আকাশটা আরো নীল

Comments