স্ল্যাক্টিভিজমের সাহসী নয়া দুনিয়া

 




ইভজেনি মরোজোভ

মে ১৯, ২০০৯

অনুবাদঃ সাদিক মাহবুব ইসলাম

গত সপ্তাহে দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল ‘স্ল্যাক্টিভিজম’ এর ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে (প্রতিবেদনটা এই বিষয়ের ওপর কয়েক সপ্তাহ আগে সিবিসি স্পার্ককে দেয়া আমার একটি সাক্ষাতকার থেকে অনুপ্রাণিত বলেই মনে হচ্ছে।) সামাজিক বা রাজনৈতিক কোনো প্রভাব নেই এমন মনভুলানো অনলাইন অ্যাক্টিভিজমকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ‘স্ল্যাক্টিভিজম’ শব্দটা। এধরনের অ্যাক্টিভিজম মানুষকে একটা ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হওয়া ছাড়া আর কিছু না করেই পৃথিবীতে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলার একটা ঘোরে ফেলে দেয়। কদিন আগে আপনি একটা অনলাইন পিটিশনে সাইন করে আপনার পরিচিত সবার কাছে সেটা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন; সেটার কথা মনে আছে আপনার? এটা সম্ভবত স্ল্যাক্টিভিজমই ছিল।

অলস প্রজন্মের জন্য আদর্শ অ্যাক্টিভিজম হলো এই স্ল্যাক্টিভিজম। ভার্চুয়াল জগতে প্রতিবাদ জানানো গেলে কার দায় পড়েছে রাজপথে নেমে পুলিশের ঠ্যাঙানি আর গ্রেফতারের ঝুঁকি নেবার? আজকের দিনে মিডিয়া যেভাবে ব্লগিং থেকে শুরু করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মত সব অনলাইন স্পেসে নজর রাখে তাতে যেকোনো মহৎ উদ্দেশ্যে আপনার কিবোর্ড টেপাটেপি ফুটেজ পাবেই। এখন মিডিয়া অ্যাটেনশন পেলে যে আন্দোলন সফল হয় কি হয় না সেটা পরের আলাপ।

স্ল্যাটিভিজমের সমর্থকরা তাদের কাজের সাফাই গাইতে একটা কমন ন্যারেটিভের আশ্রয় নেনঃ এরকম ভার্চুয়ালি অ্যাক্টিভিজম করার কারণে আন্দোলন সংগঠিত করার খরচ নাটকীয়ভাবে কমে গেছে; কিন্তু আন্দোলনের গুণগত মান এবং কার্যকারিতা একেবারেই কমেনি। একই সাথে স্ল্যাক্টিভিজমের বেশিরভাগ সমালোচনাই সহজে খারিজ করে দেয়া যায়। আগে কোনোরকম অ্যাক্টিভিজমের সাথে জড়িত ছিল না এরকম হাজার হাজার মানুষ ফেসবুক বা টুইটারের মাধ্যমে এমন ‘ন্যানো-অ্যাক্টিভিজম’ এর সাথে যুক্ত হচ্ছে; এই যুক্ত হওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা কেবল তখনই কাজে আসবে যখন ব্যাপক মিডিয়া অ্যাটেনশন আন্দোলনের উপকারে আসে।

হয়তো এখন সময় এসেছে এই ন্যারেটিভকে চ্যালেঞ্জ করার। আমাদের এখন প্রশ্ন করা উচিতঃ এভাবে মিডিয়া ফুটেজের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে সনাতন আন্দোলনের পদ্ধতি থেকে দূরে যাচ্ছে; এই দূরে সরে যাবার ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে তা কি এই মিডিয়া কভারেজ দিয়ে পূরণ করা যাচ্ছে? মিছিল, অবস্থান-ধর্মঘট, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, অবরোধের চাইতে নিরাপদ এই স্ল্যাক্টিভিজমের কার্যকারিতা তো এখনো পরীক্ষিত নয়!

এখন আমরা ‘এক হাজার স্ল্যাক্টিভিস্টের পাবলিক ওয়ার্ক একজন সনাতন আন্দোলনকারীর অগোচরে রয়ে যাওয়া অ্যাক্টিভিজমের সমান’ – এরকম গায়েবি হিসেব-নিকেশ করতে না বসি। এখানে মোদ্দা ইস্যু হলো, হাতের নাগালে এত স্ল্যাক্টিভিস্ট থাকার ফলে যারা ইতিপূর্বে সরকারের বিরুদ্ধে মুখোমুখি মোকাবিলা করত, তারা না আবার রাজপথ ছেড়ে ফেসবুকের হাজারো ইস্যুর সাথে জড়িয়ে অনলাইন অ্যাক্টিভিজম শুরু করে। এই ঘটনা হলে আমাদের এত সাধের ডিজিটাল মুক্তি তো আমাদের গণতন্ত্রায়ন আর আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ গড়ে তোলা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

অবশ্যই আমাদের প্রত্যাশা হলো- অনলাইন অ্যাক্টিভিজমে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে মানুষের মনে রাজপথের আন্দোলনে সশরীরে উপস্থিত হবার আগ্রহ জন্মাবে। কিন্তু একইসাথে এমনটাও ঘটতে পারে, একটা বড় অংশই কেবল স্ল্যাক্টিভিজম করেই হাত ধুয়ে ফেলবে; বাস্তবের আন্দোলনে এসে কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়ার ঝুকি আর নেবে না। অনলাইন অ্যাক্টিভিজম তো রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ওপর এমন বিরূপ প্রভাব ফেলতেও পারে। তাহলে কি আমাদের অনলাইন অ্যাক্টিভিজমের সাফল্য নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আরো সতর্ক হওয়া উচিত?

আমার কাছে আসলে এর কোনো সদুত্তর নেই। আমার মনে হচ্ছে এই প্রশ্নের যথার্থ উত্তর পাওয়া যাবে বৈজ্ঞানিক পন্থায়- আমাদের ব্যাপক আকারে জরিপ চালাতে হবে। নইলে এসব চিন্তাভাবনা কেবলই যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়ে যাবে। আমি আরো মনে করি অন্যান্য ক্ষেত্রেও স্ল্যাক্টিভিজমের মত অবস্থার খোজ করা উচিত। যেমন- ‘এথিক্যাল কনজিউমারিজম’ এর প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ কি অন্যান্য কার্যকর (ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক)  প্রতিবাদের প্রতি বিমুখতা সৃষ্টি করে? যেহেতু এথিক্যাল কনজিউমারিজমের সমর্থকরা ‘ভোটিং এর চেয়ে শপিং বড়’ মার্কা বুলি আওড়ান, এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব না।

ফরেন পলিসি থেকে তরজমাকৃত।

ইভজেনি মরোজভ

ইভজেনি মরোজভ বেলারুশ বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক। তিনি সমাজ ও সিয়াসিয়াতের ওপর টেকনলজির প্রভাব নিয়ে বহু কেতাব মুসাবিদাকারী।

Comments